আজ ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাগজে-কলমেই ডিম-মুরগির দাম নির্ধারণ

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক

গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। আজ পাঁচদিন পেরোলেও বাজারে কেউই মানছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম। ফলে এই দুই পণ্য নিয়ে সরকারি নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা ‘অফিসে বসে’ একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেখানে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৬৫ টাকায়, যা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও ২৩ টাকা বেশি। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭৫ টাকা করে, যা আবার নির্ধারণ করে দেওয়া দামের তুলনায় ৫ টাকা কম। সরকার কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করেছে।

বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ২৮০ টাকা কেজি। তবে সরকারিভাবে কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আজকের বাজারে দেশি প্রজাতির মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, যা পূর্বেও একই দামে বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সরকার নির্ধারিত দামে দেশি মুরগির দাম প্রসঙ্গে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এদিকে বাজারে মুরগির দাম নিয়ে ক্ষোভ না থাকলেও ডিমের দাম নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে ভোক্তাদের মধ্যে। তাদের দাবি, ডিমের বাজারে এখনও শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি পিস ডিম আমদানি খরচসহ ৭ টাকা দাম পড়লেও বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিম কেন প্রতি পিস ১৪/১৫ টাকা হবে? সরকারই কীভাবে প্রতি পিস ১২ টাকা করে নির্ধারণ করে দেয়?

ডিমের দাম প্রসঙ্গে তানজিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের পর ডজন প্রতি ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এতোদিন যেই ডিম বিক্রি হতো ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে দেশে মাসখানেক ধরে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১৬৫-১৭০ টাকা, সেটিও আবার সরকার দাম বাড়িয়ে ১৮০ টাকা করে দিয়েছে। তাহলে সরকার দাম নির্ধারণ করে কার স্বার্থ হাসিল করেছে?

তিনি বলেন, কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়া থেকে কিছু ডিম বাংলাদেশে আনা হয়েছে, যা আনতে খরচসহ প্রতিপিস ডিমের দাম পড়েছে ৭ টাকা। সে হিসাবে তো কোনোভাবেই এই ডিমের ডজন ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আমরা তো ভাবছিলাম একটা নতুন সরকার এলে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সবকিছুর একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেবে, এখন পর্যন্ত সেটার কোনো প্রতিফলন নেই।

রফিক মিয়া নামে আরেক ক্রেতা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের মতো যারা নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না, তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিনদিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০/৩৫ টাকা হালি, সেটা এখন ৫৫ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউই নেই?

তবে বাজারে ডিম-মুরগির দাম নিয়ে বরাবরই এক জবাব ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, দেশের বাজারে মুরগির খাদ্যের প্রচুর দাম। তাছাড়া সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে।

রফিক মিয়া নামে এক বিক্রেতা বলেন, শুনেছি সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু পাইকারি বাজারে কিনতে গিয়ে দেখি উল্টো বেড়ে গেছে। আড়তদাররা বলছে বাজারে ডিমের সংকট আছে। জানি না হঠাৎ করে কেন সংকট তৈরি হলো৷ তবে আমাদের যদি বেশি দামে কিনে আনতে হয়, তাহলে তো সে অনুযায়ী একটু বাড়িয়েই বিক্রি করতে হবে।

ভারতীয় ডিম আসার পরও কেন দাম বাড়ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিক্রেতা বলেন, এখন পর্যন্ত আমি বাজারে কোনো ভারতীয় ডিম দেখিনি। শুনেছি এসেছে, কিন্তু কোথায় এসেছে সেটা জানি না। আমরা সাধারণ বিক্রেতা, ২/৪ টাকা লাভ হলে যে দেশের ডিমই আসুক, বিক্রি করব। তবে দামটা কম থাকলে আমাদের জন্যও ভালো। দাম বেশি থাকলে তো মানুষ কিনতে চায় না।

মুরগির মাংস বিক্রেতা মনসুর আলী বলেন, গত কয়েকদিনে ব্রয়লার মুরগির দামটা একটু বেশি। গত সপ্তাহেও ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, আজকে ১৭৫ টাকা। বাজারে মুরগির চাহিদা বেশি, কিন্তু সে অনুযায়ী সাপ্লাই নেই। শুনেছি বন্যার কারণে অনেক খামারির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যেকারণে সেই চাপটা এসে পড়েছে বাজারে।

এর আগে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে ২০২৪ সালের মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ছাড়াও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ, অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশসন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রেডিয়েটস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর